গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-08)
#অচেনা ভালোবাসা
[পর্ব - ৮]
লেখক - আবির চৌধুরী
নুপুর এদের কথা শুনে জেলাস ফিল করছে। আর একের পর এক সবাই বলতে থাকে দোস্ত দেনা প্লিজ।
নুপুর -- এই তোরা চুপ থাকবি বেশি কথা বলচিস। আচ্ছা কনক কই ওঁকে তো দেখতে পারছিনা ও আসবে না নাকি?
-- বলছে আসছে রাস্তায় আছে চলে আসবে এখনই।
বলতে বলতে কনক চলে আসলো। কনক কে দেখে সবাই এগিয়ে গেল।
কনক -- কিরে তোরা সব এক যায়গায় বেপার কি? কোনো পোলার সন্ধান ফেলি নাকি? তোরা আসলে কোনো দিন ঠিক হবি না।
নিলা -- দোস্ত নুপুর একটা ছেলেকে নিয়ে আসছে খুব কিউট।
কনক -- তয় তোরা চুপ থাক এই চিকনা আমার। ছেলেটা কই?
নিলা হাত দিয়ে কনক কে দেখিয়ে দিল জাহিদ কে। এবার কনক জাহিদের দিকে এগিয়ে গেল।
কনক -- হাই হ্যান্ডসাম।
আমি -- আমাকে বলছেন নাকি?
-- আরে হ্যাঁ আপনাকেই বলছি। আপনি এতো কিউট কেন?
মেয়েটার কথা শুনে আমি পুরাই আবুল হয়ে তাকিয়ে রইলাম। এবার নুপুর এগিয়ে আসলো।
নুপুর -- তোরা সবাই কি শুরু করলি এসব? মাথা খারাপ নাকি তোদের?
কনক -- তোর সমস্যা কি তোর বয়ফ্রেন্ড নাকি এটা?
নুপুর -- হুম আর তোদের দুলাভাই। এবার চুপ থাক।
আমি নুপুরের কথা শুনে হালকা অবাক হলাম। তাও কিছু বললাম না বুঝতে পারছি হয়তো এই লেডি গুলার হাত থেকে বাচাতে এসব বলছে। তাই কিছু মনে করলাম না। তবে মেয়ে গুলা অনেক কিউট ক্রাশ খাওয়ার মতো। তবে সবার থেকে বেশি সুন্দর লাগছে নুপুর কে। বিয়ে মোটামুটি শেষ হয়ে আসলো। এবার আমরা চলে যাবো। এমন সময় সবাই আমাদের দিকে এগিয়ে আসল। এরা এসেই আবার ঝগড়া শুরু করে দিল। সবার মুখে আচমকা কি যেনো পড়লো। সাথে সাথে মুখ ধুয়ে ফেলছে। বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই আমি এই দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমি যাদের উপরে ক্রাশ খেলাম তাদের আসল মুখ দেখে ভুত দেখার মতো অবস্থা হয়ে গেলো আমার। কি আর বলব এই জন্য আটা ময়দার এতো চাহিদা।
বিয়ে শেষ হতে হতে রাত হয়ে গেলো। তারপর আমরা গাড়িতে উঠে বাসায় চলে গেলাম। গড়ি তখন রাত ১১ টা বাজে আমি আমার রুমে শুয়ে আছি হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ পেয়ে তাকালাম। চোখ খুলে দেখি নুপুর। নুপুর কে দেখে আমি উঠে বসে গেলাম। নুপুর আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বলছে না।
তাই আমি জিজ্ঞেস করলাম -- কি হইছে কিছু বলবে নাকি?
নুপুর -- হুম আসলে তখনকার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। আসলে এটা না বললে এরা আপনার পিছু ছাড়তো না।
-- সমস্যা নাই আমি বুঝতে পারছি।
-- কিছু মনে করবে না আমার বান্ধুবী গুলো একটু ফাজিল টাইপের।
-- হুম দেখেই বুঝতে পারলাম। বাদ দেন এসব আর এখন ঘুমিয়ে পড়ুন।
-- আপনাকে একটা কথা বলি?
-- বলুন।
-- আপনি আমাকে তুমি করে বলুন। আর আমরা আজ থেকে বন্ধু ঠিক আছে।
-- ওকে ঠিক আছে কিন্তু আপনিও আমাকে তুমি করে বলতে হবে।
-- আবার আপনি!
-- ওহ, সরি
-- আবার সরি!
-- আচ্ছা কিছু না।
এবার নুপুর খিলখিল করে হেসে দিল। মেয়েটা বাচাল হলেও হাসিটা খুব সুন্দর।
নুপুর -- ওকে শুভ রাত্রি এখন ঘুমিয়ে যাও কাল কথা হবে।
আমি -- হুম শুভ রাত্রি আপনিও ঘুমিয়ে যান।
-- আবার আপনি! (রেগে গিয়ে কথা টা বলল)
-- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি।
তারপর নুপুর আমার দিকে তাকিয়ে হালকা একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো। আমিও ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে বাধন আসলো আমার রুমে।
বাধন -- ভাইয়া উঠুন আম্মু নাস্তা করতে ডাকছে।
-- তোমার আপু কোথায়?
-- আপু তো ভার্সিটিতে চলে গেছে অনেক আগেই।
-- ওহ,আচ্ছা। তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
তারপর বাধন আমার রুম থেকে চলে গেলো। আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম। নাস্তা খেয়ে আবার আমার রুমে চলে আসলাম। কিছুক্ষণ পরে বাধন আমার রুমে আবার আসল।
আমি -- তুমি আজকে স্কুলে যাবে না?
বাধন -- না ভাইয়া আজকে আমাদের স্কুল বন্ধ। আজকে আমার গফ এর সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দেব।
আমি -- ওকে ঠিক আছে। তাকে ডেকে নিয়ে আসো।
বাধন এক দৌড়ে আমার রুম থেকে বের হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পরে একটা মেয়ে কে নিয়ে আসল। মেয়েটা দেখতে খুব মিষ্টি। মাঝখানের দাত নাই তাও খুব মিষ্টি একটা মেয়ে।
দু'জনে আমার পাসে এসে বসল।
আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম -- নাম কি তোমার?
-- আমার নান আলিশা।
-- খুব মিষ্টি নাম তোমার। তুমি যেমন মিষ্টি তোমার নাম টাও তেমন মিষ্টি।
এই কথা বলে আমি সাধনের দিকে তাকালাম। অবাবা ও দেখি ফুলছে। এই টুকু ছেলের কি জেলাস।
আমি বাধন কে বললাম -- তোমার গফ তো অনেক কিউট আমাকে দিবে নাকি?
বাধন -- এই তুমি কিন্তু বেশি করছ। তোমাকে আমি ভালো মনে করছি এখন তুমি আমার গফ এর দিকে নজর দিলে।
ওর কথা শুনে আমি আর নিজের হাসি ধরে রাখতে পারলাম না। তাও অনেক কষ্টে মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকে রাখলাম। নিজের সয়তানি টা আর ধরে রাখতে পারলাম না।
আমি -- তোমার গফ তো অনেক ছোট আমাকে দিয়ে দাও আমি বড় করে তোমাকে আবার দিয়ে দেব। আর আলিশা তুমি এতো মিষ্টি কেন?
ওবাবা মেয়ে দেখি লজ্জা পেয়ে গেলো। আর দাত বের করে হেসে দিল।
আমি আবার বললাম -- আলিশা তোমার দাত টা কে নিয়ে গেছে? বাধন নাকি?
আলিশা -- না, আমি চকলেট বেশি খাই তাই দার পড়ে গেছে।
আমি -- এতো চকলেট খাও কেন তুমি?
আলিশা -- বাধন আমাকে এনে দেয়। আর আমি খাই। খুব মজা লাগে।
-- ওহ আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরা দু'জনে বড় হলে আমি তোমাদের বিয়ে দিয়ে দেবো ঠিক আছে।
এবার বাধনের দিকে তাকিয়ে দেখি ও হাসছে। এদের এসব দেখে আমার অবস্থা খারাপ ঠোঁটে ঠোঁট চাপ দিয়ে হাসি ধরে রাখলাম। তারপর দুজনকে বললাম এখন খেলতে যাও। তারপর দু'জনেই চলে গেলো। ওদের কথা মনে পড়ে গেলো আর নিজে নিজে হেসে দিলাম। কিছুক্ষণ পরে নুপুর বাসায় আসলো৷ এসেই আগে আমার রুমে চলে আসলো।
নুপুর -- সরি তোমাকে না বলে চলে গিয়ে ছিলাম।
-- ঠিক আছে সমস্যা নাই।
-- আচ্ছা বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
তারপর নুপুর চলে গেলো। কিছুক্ষণ পরে আবার ফিরে আসলো।
নুপুর -- কাল থেকে তুমি আমার সাথে ভার্সিটি যাবে ওকে। আজকে তোমার ব্যাপারে কথা বলে আসলাম। তাকে না জানিয়ে এসব করে ফেললাম।
নুপুরের কথা শুনে আমি একটু না অনেক অবাক হয়ে গেলাম। ও কি করে যানে আমি আর ও একি ক্লাস এর? তা হলে নুপুর কি আমার ব্যাপারে সব জেনে গেছে?
নুপুর - আমি জানি তুমি এখন কি ভাবছ।
আমি হালকা ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম -- কি!
নুপুর -- আসলে তোমার বেগে একটা কাগজ ছিল। অনেক অংশ ছিলনা। সেখানেই দেখলাম। আর তোমার জন্য এটা সারপ্রাইজ। কেমন দিলাম?
-- খুব ভালো।
আমার হালকা ভয় কমে গেল৷ এটা যেনে সে তাহলে ও কিছুই যানে না৷ দেখতে দেখতে আজকের দিন পার হয়ে গেলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে নুপুরের সাথে ভার্সিটি চলে গেলাম। ভার্সিটিতে ঢুকতে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কোনো দিকে ভালো করে না তাকিয়ে নুপুরের সাথে হেটে যাচ্ছি। নুপুর একটু পর পর আমার দিকে তাকায় আর অন্য দের দিকে তাকায়। তারপর আমরা আমাদের ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাসে গিয়ে বসতেই সবার আমার দিকে এগিয়ে আসলো বন্ধুত্ব করার জন্য।
সবার সাথে পরিচয় হলাম। সবার সাথে কথা বলতে বলতে নুপুরের কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখি নুপুর মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আমার পাসে একটা ছেলে বসেছে তার নাম রিয়াজ। ওর সাথেও ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেলো। একটু পরে ক্লাসে স্যার চলে আসলো। স্যার ক্লাশ করাতে শুরু করে দিলেন। হঠাৎ স্যারের চোখ পড়ল আমার দিকে।
স্যার -- এই তুমি দাড়াও তো।
তারপর আমি উঠে দাড়ালাম।
-- তোমাকে তো এর আগে এই ক্লাসে দেখি নাই। নাম কি তোমার?
-- জ্বী স্যার আমার নাম জাহিদ আর আমি নতুন আজকে আমার প্রথম ক্লাস।
-- ওহ ঠিক আছে মন দিয়ে ক্লাস করো আর সবার সাথে পরিচয় হয়ে নিবা।
-- জ্বী স্যার।
-- ঠিক আছে বস।
তারপর ক্লাস শেষ করে স্যার চলে গেলো। নুপুর এসে বলল আমার সাথে চল তুমি। বুঝতে পারছিনা এখন ও আমাকে আবার কই নিয়ে যাবে কোনো প্রশ্ন না করে ওর সাথে চলে গেলাম।